Header ADS

Header ADS

সর্বনাশা বকুল কথা

আমি লাগেজটা হাতে নিয়ে মাকে বললাম,
-- মা, আমি চলে যাচ্ছি..
মা টিভির দিকে তাকিয়ে বললো,
-ঠিক আছে যা..
আমি অবাক হয়ে মাকে বললাম,
-- মা আমি কয়েকদিনের জন্য উত্তরাতে রিনা খালার বাসায় যাচ্ছি না যে তুমি বলবে ঠিক আছে যা। আমি দুই বছরের জন্য দেশের বাহিরে যাচ্ছি। কোথায় তুমি আমার মাথায় হাত রেখে আমায় দোয়া করে দিবে তা না। তুমি শুধু বলছো ঠিক আছে যা...
মা আমার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বললো,
- যাবি তো যা। সিরিয়াল দেখার সময় আমায় ডিস্টার্ব করিস না। বকুলের বাবার খুনি কে এইবার মনে হয় ধরেই ফেলবে...
দুবছর পর যখন দেশে আসি তখন মাকে কিছু বলি নি। ভেবেছিলাম এতদিন পর মাকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে।
বাসায় এসে দেখি মা টিভি দেখছে। আমি চিৎকার করে মাকে বললাম,
--মা, তোমার ছেলে এতদিন পর তোমার কোলে ফিরে এসেছে। মা টিভির দিকে তাকিয়ে বললো,
- এসেছিস ভালো হয়েছে...
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-- মা, আমি পাশের মুদির দোকান থেকে এক হালি ডিম নিয়ে আসি নি যে তুমি বলবে এসেছিস ভালো হয়েছে। আমি দুই বছর পর দেশে ফিরেছি। কোথায় আমায় দেখে আনন্দে আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিবে তা না করে তুমি টিভির দিকেই তাকিয়ে আছো..
মা টিভির দিকে তাকিয়ে বললো,
-- আজ বকুলের বাবার খুনির নাম প্রকাশ পাবে। খুব উত্তেজনার মুহূর্ত চলছে। না জানি কার নাম প্রকাশ পায়। তুই এই মুহূর্তে ইমোশনাল কথা বলে ডিস্টার্ব করিস না তো। এমনিতেই আমি চিন্তায় আছি...
আমি কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম,
-- আমি বিদেশে যাওয়ার আগে দেখেছিলাম এই খুনের তদন্ত চলছে আর দুই বছর পরেও এখনো খুনিকেই ধরতে পারলো না। তাহলে সিরিয়াল শেষ হবে কবে?
এইবার মা আমার দিকে তাকিয়ে রেগে গিয়ে বললো,
- খুনিকে ধরা এত সহজ না কি? মানুষ বছরের পর বছর চেষ্টা করে খুনিকে ধরতে পারে না আর এটা তো মাত্র দুই বছর ধরে ধরার চেষ্টা করছে। তবে এইবার ঠিক ধরতে পারবে কারণ বকুল কনস্টেবল হয়েছে...
আমি কিছু না বলে শুধু একবার উপরের দিকে তাকালাম তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম...
সেদিন রুমে বসে বই পড়ছি। মা আমার পাশে এসে চুপ করে বসে রইলো। আমি মাকে বললাম,
-- মা, তোমার কি মন খারাপ?
মা আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বললো,
- মানুষ কিভাবে একজন নির্দোষ মানুষকে মেরে ফেলতে পারে?
মার কথা শুনে আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাকে বললাম,
-- ঠিক বলেছো। শুধু ফেইসবুকের একটা পোস্টের জন্য ফাহাদের মত একটা নিষ্পাপ ছেলেকে মেরে ফেললো।
আমার কথা শুনে মা অবাক হয়ে বললো,
- ফাহাদ কে?
আমি চমকে গিয়ে বললাম,
-- বুয়েটে যে পড়তো সেই ছেলেটা। যার কথা তুমি বলছো..
আমার কথা শুনে মা অবাক হয়ে বললো,
-- আমি তো বকুলের বাবার কথা বলছি। ঋষির পিসু মশাই শেষে কি না বকুলের বাবাকে মারলো। আমি তো ফায়াদ নামে কাউকে চিনিই না...
আমি মার কথা শুনে উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবলাতে লাগলাম, দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হোক। দেশের সব মানুষ মারা যাক এটা কোন বিষয় না। বিষয় হলো সিরিয়ালে বকুলের বাবা কেন খুন হলো সেটা। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম কারণ এখন মার পাশে থাকলে মা আমাকে বকুল কথা সিরিয়ালের গল্প শুনাবেন...
খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছি আর ফেসবুকিং করছি। মা আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে যখন রাখতে যাবে তখন ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-কি রে, মেয়েটা বকুল না?
আমি বললাম,
-- আরে না। মেয়েটার নাম শমরিতা শিলা।
মা মেয়েটা ছবিটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললো,
- মেয়েটা দেখতে ঠিক বকুলের মত। তা মেয়েটা কে?
আমি মাকে বললাম,
-- মেয়েটা হলো তোমার সবচেয়ে ছোট চাচাতো ভাই রাকিব মামার গার্লফ্রেন্ড। আমিই ওদের প্রেমটা করিয়ে দিয়েছিলাম। রাকিব মামা এখনো বেকার তাই ওদের বিয়েটা হচ্ছে না...
মা আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
- তোর এত পন্ডিতগিরি করে প্রেম করিয়ে দিতে হয় কেন? যাক ভাগ্য ভালো যে ওদের বিয়েটা হয় নি। আমার কত দিনের ইচ্ছে বকুলের মত দেখতে একটা মেয়েকে আমার ঘরের বউ বানাবো। এই মেয়ের সাথেই আমি তকে বিয়ে করাবো..
মার কথা শুনে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো।মুখ দিয়ে কোন কথায় বের হচ্ছিলো না। অনেক কষ্টে মাকে বললাম,
-- মা, আমি এই মেয়েটাকে মামী বলে ডাকি। তুমি এইসব কি বলছো?
মা আমায় জোরে ধমক দিয়ে বললো,
- আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে...
রাকিব মামা আর আমি প্রায় সমবয়সী। দুইজনে একসাথে চলাফেরা করেছি। এখন যদি উনার গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করি তাহলে উনাকে কিভাবে মুখ দেখাবো সেটাই ভাবছি..
মার প্রস্তাবে শিলার বাবা মা এক কথায় রাজি হয়ে গেলো। কারণ ছেলে বড় চাকরি করে তাছাড়া দেশের বাহির থেকে ডিগ্রী নিয়ে এসেছে। এমন পাত্র পেলে রাজি না হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না...
এই মুহুর্তে আমার পাশে রাকিব মামা আর আমার সামনে শিলা বসে আছে। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি আর রাকিব মামা শুধু একটু পর পর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। মা রাকিব মামাকে জোরে ধমক দিয়ে বললো,
- তুই শ্বাসকষ্টের রোগীদের মত হুশহাস করছিস কেন। ওদের একটু একা থাকতে দে। তুই সামনে থেকে যা..
রাকিব মামা চলে গেলে আমি শিলার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-- বিশ্বাস করো মামী আমার কোন দোষ নেই।
শিলা আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো,
-একটা থাপ্পড় মারবো ফাজিল কোথাকার। ২ দিন পর যাকে বিয়ে করবে তাকে এখন মামী বলে ডাকছো? তোমার মা কি জগতে আর মেয়ে খুঁজে পেলো না?
আমি মাথা নিচু করে করে বললাম,
-- সব দোষ হলো এই বকুল কথা সিরিয়ালের আর তোমার এই বকুল মার্কা চেহারার...
শিলা রাগে দাঁতের সাথে দাঁত চেপে বললো,
- তোমার আর তোমার মার জন্য আমার প্রেম বিসর্জন দিতে হলো। এখন বুঝবে তোমরা সিরিয়ালের ডায়নীদের মত কেমন তোমাদের সংসারে শুধু ঝামেলা লাগায়..
শিলার কথাগুলো আমার কানে আসছিলো না। আমি শুধু অবাক হয়ে শিলাকে দেখছিলাম। শিলার নাক লাল হয়ে গিয়েছিলো আর গোলাপি ঠোঁট গুলো কাঁপছিলো। শাস্ত্রে আছে যে মেয়ে রাগলে নাক লাল আর ঠোঁট কাঁপতে থাকে সেই মেয়ে ফুলশয্যার পর স্বামীকে খুন করে...
আজ আমার বাসর রাত। আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে যখন পালাতে যাবো তখন শিলা আমার হাত ধরে বললো,
~কোথায় যাচ্ছো সোনা?
আমি কাঁদোকাঁদো গলায় বললাম,
-- আমায় প্লিজ ছেড়ে দাও। আমি বাঁচতে চাই..
শিলা বাঁকা ঠোঁটের হাসি দিয়ে বললো,
~ ফুলশয্যা না করে তোমায় আমি ছাড়ছি না। আমি এইবার কেঁদে দিয়ে বললাম,
--আমায় মাফ করে দাও প্লিজ...
রুমে হালকা নীল আলো জ্বলছে। আমি জড়সড় হয়ে রুমের এককোণে দাঁড়িয়ে আছি। শিলা দরজা বন্ধ করে ক্রমশও আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তারপর...
বিঃদ্রঃ- তারপর আমার কি হলো সেটা পাঠকের না জানলেও চলবে। কিছু গল্প না হয় অসমাপ্তই থাকলো। এই গল্পের কোন নেক্সট হবে না...

No comments

Powered by Blogger.